ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং কি
ফ্রিল্যান্সিং:
বর্তমান সময়ে তরুনদের কাছে সবচাইতে আলোচিত একটি শব্দ টি হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) । ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এর অর্থ হলো স্বাধীন বা মুক্তপেশা। অন্যভাবে বলা যায়, নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করা কে ফ্রিল্যান্সিং বলে। এ ধরণের পেশাজীবিকে বলা হয় ফ্রীলেন্সার (Freelacer) বা স্বাধীনপেশাজীবি।
চাকরীজীবিদের মতো এরা বেতনভুক্ত নয়। কাজ ও চুক্তির উপর নির্ভরকরে আয়ের পরিমাণ কম বা অনেক বেশি হতে পারে, তবে স্বাধীনতা আছে, ইচ্ছা মতো ইনকামের সুযোগ ও আছে, । এজন্য স্বাধীনমনা লোকদের আয়ের জন্য এটা একটা সুবিধাজনক পন্থা।
আধুনিক যুগে বেশিরভাগ মুক্তপেশার কাজগুলো ইন্টারনেট মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলে মুক্ত পেশাজীবীরা ঘরে বসেই তাদের কাজ করে উপার্জন করতে পারেন। এ পেশার মাধ্যমে অনেকে প্রচলিত চাকরি থেকে বেশি আয় করে থাকেন, তবে তা আপেক্ষিক। ইন্টারনেটভিত্তিক কাজ হওয়াতে এ পেশার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি হাজারো ক্লায়েন্টের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটে। যার কারণে বর্তমানে ছাত্র- ছাত্রী এবং অনেক চাকুরীজীবি এই পেশায় আসছেন।
বর্তমানে আউটসোর্সিং হচ্ছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের তৃতীয় ক্ষেত্র। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে মাল্টি বিলিয়ন ডলারের একটা বিশাল বাজার।
আউটসোর্সিং কি :
একটু ভাবুন তো আপনার একটি কোম্পানি আছে আপনি কিছু পোস্টার তৈরী করা প্রয়োজন এখন আপনি কি করবেন ? নিশ্চই কোন প্রিন্টিং কোম্পানি অথবা যারা এধরনের কাজ করবেন তাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। এখন একটা প্রশ্ন আপনি কেন নিজে কেন করছেন না ? উত্তর টি হচ্ছে আপনি এই সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কিন্তু যদি আপনি কাজটি করতে যেতেন তাহলে কি কি জিনিস আপনার দরকার হত।
১. আপনার একজন ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইনার দরকার হত।
২. একটা ছাপাখানা দরকার হত।
৩. আপনার কাটিং মেশিন দরকার হত।
মোটামোটি এগুলো হলে আপনার পোস্টার টি আপনি তৈরী করতে পারেন। আপনার ২০০০ পোস্টার করার জন্য কত কিছুই না দরকার হত। কিন্তু আপনি যদি অন্য কোন কোম্পানি যারা এই ধরনের কাজটি করে তাদের কে দেন তারা আপনার কাজটি করে দেবে খুব সহজে এটা ও এক ধরনের আউটসোর্সিং। একটি কোম্পানির কাজ অন্য কোন কোম্পানি কে দিয়ে করিয়ে নেয়া। আরো সহজ ভাবে যদি বলতে যাই তাহলে অন্য কোন দেশের অন্য কারো কাজ বাড়িতে বসে ইন্টারনেট এর মাধমে করাই হচ্ছে আউটসোর্সিং।
কেন ফ্রিল্যান্সিং সেরা?
শিক্ষাজীবন শেষে নিজের পেশা বেছে নিতে হয়। ব্যক্তিজীবন, পরিবার আর পেশাজীবনের সবচেয়ে ভাল সমন্বয়কেই ভাল থাকা বলে মনে করি আমি। এই ভাল থাকার জন্য প্রধানত যে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন তা হচ্ছে- স্বাধীনতা, স্বাচ্ছন্দ এবং পর্যাপ্ত আয়। চলুন দেখি ফ্রিল্যান্স-আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু সুবিধা এ ক্ষেত্রগুলোতে পেতে পারি।
১. আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন আপনি কখন কাজ করবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- আমি প্রতিদিন কাজ করি রাত এগারোটা থেকে সকাল ছয়টা, দুপুর পর্যন্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজ করে দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঘুমাই। এভাবে কাজ করতে আমাকে কেউ বাধ্য করেনি। আমার কাছে এই শিডিউলটা সুবিধাজনক মনে হয় তাই এভাবে করি। কোনদিন ইচ্ছা হলো আজ রাতে কাজ করবো না, অন্য সময়ে করবো, তাতেও কেউ নিষেধ করবে না। কিন্তু আগের ৯ বছরের কর্মজীবেন আমি কখনো ভাবতে পারিনি অফিসে বস্কে বলবো আজ আমি সকালে অফিসে না গিয়ে সন্ধ্যায় যাব বা দুদিন অফিসে না গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবো!
২. আপনিই সিদ্ধান্ত নেবেন কোথায় বসে কাজ করবেন। এক্ষেত্রেও আমার নিজের কথা বলা যায়। আমার পার্সোনাল ডেস্কটা আমার বেডরুমেই। আপনি কোন চাকরি করেন কিংবা অন্য কোন ব্যবসা করেন, বেড়াতে ইচ্ছা হলেই আপনি বেড়াতে যেতে পারবেন না। যদি চাকরী হয় তাহলে ছুটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে, ব্যবসা হলে আপনার প্রতিষ্ঠান ফেলে যেতে হবে। এরকম ভ্যাগাবন্ড ফ্যামিলি তৈরি তো দূরের কথা, এমন কিছু স্বপ্ন দেখতেও দ্বিধা হবে! এরা সবাই বছরের পর বছর দেশে বিদেশে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এদের কাজ থেমে থাকে না। এরা যেখানে যায় এদের অফিসও সেখানে। একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার ল্যাপটপ আর একটা ছোট্ট ট্রাভেল ব্যাগই যথেষ্ট। আপনাকে অফিসে যেতে হবে না, বরং অফিসই আপনার সাথে যাবে। কাজের জন্য আর কতটা স্বাধীনতা চান?
৩. লোকাল বিজনেসের সাথে এটার সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে, এক্ষেত্রে আপনার ব্যবসাক্ষেত্র বিশ্বব্যাপি। ফলে গ্রাহকসংখ্যা বহুগুণ বেশি। এজন্য কাজেরও কোন অভাব নেই। এখানে আপনি সার্ভিস প্রোভাইডার এবং আপনিই সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে আপনার সার্ভিস প্রোভাইড করবেন আর কাকে না। ধরা যাক, আপনি কোন একটা শহরে একটা দোকান দিয়েছেন। ব্যবসা বেশ ভালই চলছে, কিন্তু আপনার শহরে হঠাৎ কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে হয়তো বেশ কিছুদিনের জন্য আপনার ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনার ব্যবসা শুধু আপনার শহরকেন্দ্রিক নয়, তাই ঝুঁকিও কম। যেমন- আমার একজন ক্লায়েন্ট নিউ জার্সিতে থাকেন। কিছুদিন আগে হ্যারিকেন স্যান্ডিতে তাঁর এলাকা তছনছ হয়ে গেছে। এরকম অবস্থায় তাঁর কাজও হুট করে কিছুদিনের জন্য স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমার অন্যান্য শহরের বা অন্যান্য দেশের ক্লায়েন্টদের কাজ ঠিকই চলেছে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের মানে এই নয় যে আপনাকে সারাজীবন একা একাই কাজ করতে হবে। আমি নিজেও একা কাজ করি না। আমাদেরও অফিস আছে। তবে সেটাও ভার্চুয়াল অফিস। ক্রিয়েটিভ এলিয়েন্সের কে কোথায় বসে কাজ করলো সেটা নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যাথা নেই। কাজ ঠিকঠাক হলেই হলো। আমাদের প্রতিষ্ঠানের হয়ে বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইন এবং চেক প্রজাতন্ত্রের ১৪ জন ছেলেমেয়ে যার সুবিধামত জায়গায় বসে নিয়মিত কাজ করছে এটা ভাবতেও ভাল লাগে। আমরা চাই যে জায়গাটিতে বসে আমাদের এমপ্লয়িরা যেখানে সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারেন, যেভাবে এবং যে পোষাকে ক্রিয়েটিভিটি দেখাতে সেভাবে বসেই কাজ করুক। মুদি দোকান থেকে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, চাকুরিতে কোথাও এটা কল্পনাও করা যায় না।
৪. আপনি কতটা আয় করতে চান? কথাটা আপাতদৃষ্টিতে হাস্যকর মনে হবে। যেখানে দেশে সর্বোচ্চ শিক্ষাস্তর শেষ করার পরও কয়েক লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয় একটা চাকরীর আশায়, তারপরও চাকরীটা হবে কিনা এটার নিশ্চয়তা আপনাকে কেউ দিতে পারে না। সেখানে উল্টো কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করে কোন ঘুষ ছাড়াই নিজের যোগ্যতায় আপনি প্রতি মাসে কি পরিমাণ আয় করতে চান! তাহলে হাসি আসতেই পারে। কিন্তু কথাটা মোটেও হাসির নয়। আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতার উপরেই নির্ভর করবে আপনি কতটা আয় করবেন। আর আপনি যখন আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করবেন, স্বাভাবিকভাবেই আপনার কাজের দাম স্থানীয় বাজারের চাইতে কয়েকগুণ বেশি হবে।
কোথায় কাজ পাবেন?
ওডেস্কঃ
ওডেস্ক ডট কম (oDesk.Com) বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট (Freelancing Sites)। এখানে ঘন্টাপ্রতি এবং ফিড প্রাইস এ দুধরণের কাজ পাওয়া যায়। কাজের পেমেন্ট নিশ্চয়তা দেওয়া হয় ঘন্টাপ্রতি কাজ করলে। আর ফিড প্রাইসে অর্থপ্রাপ্তি নির্ভর করে আপনার নিয়োগকারীর উপর। নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সবাই ওডেস্কের ঘন্টাপ্রতি কাজ রেকমেন্ড করেন।
ফ্রিল্যান্সারঃ
অনলাইনের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস ফ্রিল্যান্সার ডট কম (Freelancer.Com)। প্রতিষ্ঠানটি একদম শুরু থেকেই নানারকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে, আর এ প্রতিযোগিতার কারণেই হয়ত প্রতিষ্ঠানটির নাম শুনে থাকবেন আপনারা। সর্বশেষ এসইও অ্যান্ড রাইটিং প্রতিযোগিতায় ওয়ার্ল্ড চ্যা¤িপয়ন হয় বাংলাদেশি ডেভসটিম লিমিটেড। এই সাইটটিতে সব কাজই ফিড প্রাইস নির্ভর। ঘন্টাপ্রতি কাজের কোন সিস্টেম এখনো চালু হয়নি। এদের বিভিন্ন মেম্বারশীপ সিস্টেম আছে যেটার মাধ্যমে আপনি টাকা খরচ করে বাড়তি সুবিধা ভোগ করতে পারেন।
ইল্যান্সঃ
ওডেস্ক এর মত ইল্যান্স ডট কম(Elance.Com) আরেকটা জনপ্রিয় সাইট এবং এটাও ঘন্টাপ্রতি কাজে পেমেন্ট এর নিশ্চয়তা দেয়। বাড়তি সুবিধা হলো ফিড প্রাইজের কাজের ক্ষেত্রেও এরা পেমেন্ট গ্যরান্টি সুবিধা দেয় যেটাকে এস্ক্রো বলে। এখানেও ফ্রিল্যান্সারের মত মেম্বারশিপ সিস্টেম আছে।
গুরুঃ
আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উপরের তিনটা কোম্পানি ই বেশি জনপ্রিয়। এদিক থেকে গুরু ডট কম (guru.com) খুব একটা জনপ্রিয় নয়। তবে যেহেতু এখানে লোকজনও কম, সুতরাং নতুনরা চাইলে এখানে একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন! তবে নতুন করে এটাতে ঘন্টাপ্রতি কাজের সিস্টেম চালু করা হয়েছে যেখানে পেমেন্ট নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। এছাড়াও আরো আছে, জুমলা ল্যান্সার এবং ফ্রিল্যান্সার সুইচ ইত্যাদি সাইটেও মোটামুটি ভাল মানের কাজ পাওয়া যায়।
অ্যাকাউন্ট তৈরি
মার্কেটপ্লেস (odesk.com, elance.com, freelancer.com and guru.com) স¤পর্কে তো জানলেন। এবার আপনাকে এর মধ্য থেকে যেকোন একটি মার্কেটপ্লেস পছন্দ করতে হবে যেখানে আপনি কাজ শুরু করতে চান।
এরপর উক্ত সাইটের নিয়মানুযায়ী অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ফেলুন। অ্যাকাউন্ট তৈরির পর অবশ্যই আপনার প্রোফাইলটিকে অনেক সুন্দর করে সাজাতে হবে। আগের কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সেগুলোকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে লিখতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে প্রতি মূহুর্তে নতুন কাজ আসছে। আপনার পারদর্শীতা আনুযায়ী প্রতিটা কাজ দেখতে থাকুন। প্রথম কয়েক দিন বিড করার কোন প্রয়োজন নেই। এই কয়েকদিন ওয়েবসাইটি ভাল করে দেখে নিন। ওয়েবসাইটের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন এবং সাহায্যকারী আর্টিকেল পড়তে পারেন। একটি কথা মনে রাখবেন, প্রথমদিকে কাজ পাওয়া কিন্তু সহজ নয়।
তাই আপনাকে ধৈর্যসহকারে বিড করে যেতে হবে। প্রথম কাজ পেতে হয়ত ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। কয়েকটি কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর আপনাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। তখন ক্লায়েন্টরাই আপনাকে খুঁজে বের করবে।
ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন জরুরী (Become Skilled in English Language):
আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং সেক্টরের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে ইংরেজি না জানা। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশের তরুণেরা আউটসোর্সিংয়ে পিছিয়ে থাকার পেছনে ইংরেজি দুর্বলতা অনেকটা দায়ী। আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে ইংরেজি অনেক বেশি গুরুত্ব¡পূর্ণ।
যেহেতু বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হয় সে জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। নতুবা কোনভাবেই আপনি আপনার বায়ারের রিকোয়ারমেন্ট যেমন বুঝতে পারবেন না তেমনি কোন সমস্যাও তাকে বুঝিয়ে বলতে পারবেন না। ইংরেজিতে দূর্বলরা উপরের কথা পড়ে হয়ত ঘাবড়ে যেতে পারেন, তবে তাদের জন্য বলতে পারি, আপনাকে কিন্তু ইংরেজিতে পন্ডিত হতে হবে এমনটি নয়!
ভাব বিনিময় এবং ব্যবসায়িক কাজগুলোর জন্য সাধারণত যে ইংরেজি ব্যবহৃত হয় সেটি জানলেই চলবে। যারা ইংরেজিতে দূর্বল তাদের এটি দূর করতে খুব বেশি যে সময় লাগবে এমনটি নয়, ২ থেকে ৩ মাস একটু চেষ্টা করলেই এ ধরণের ইংরেজি রপ্ত করা সম্ভব।
টাকা আনার উপায়
মার্কেটপ্লেসে যোগ দিলেন, কাজ পেলেন এবং সেটি স¤পূর্ণ করে সাবমিটও করলেন। এবার আপনার আয় ঘরে আনবেন কিভাবে (Money Withdrawal Process)? ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো কি কি মেথড সাপোর্ট করে সেটা দেখার আগে আমাদের দেখতে হবে আমাদের দেশে বা আমাদের ব্যাংকগুলো কি কি পেমেন্ট মেথড সাপোর্ট করে। যেমন ওডেস্ক এর কথাই ধরি, এখানে মাস্টার কার্ড, পেপাল, স্ক্রিল বা মানিবুকার এবং ডাইরেক্ট ব্যাংক ট্রান্সফার সাপোর্ট করে। এদের মধ্যে পেপাল বাংলাদেশে এখনো চালু হয়নি। তাই বাকি তিনটির যেকোন একটির মাধ্যমেই আপনাকে অর্থ উত্তোলন করতে হবে।
১. স্ক্রিল বা মানিবুকারঃ
স্ক্রিল (Scrill or Moneybookers)শুরু থেকেই নিরাপত্তার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর এবং সব দিক দিয়েই ঝামেলবিহীন অর্থ উত্তোলন মাধ্যম। এ মাধ্যম দিয়ে অর্থ উত্তোলন করার জন্য আপনাকে ংশৎরষষ.পড়স থেকে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। খেয়াল রাখবেন, নামের জায়গায় আপনার সার্টিফিকেট নাম ব্যবহার করবেন। কারণ পরে ভেরিফাই করতে হবে ব্যাংকে টাকা তোলার আগে।
কারেন্সি সিলেকশনের জায়গায় ইউএস ডলার ব্যবহার করবেন। অ্যাকাউন্ট তৈরি শেষে এবার ভেরিফাই করার পালা। স্ক্রিল থেকে ভেরিফিকেশন রিকোয়েস্ট পাঠানোর পরে আপনাকে মানিবুকার চিঠি পাঠাবে ঠিকানা ভেরিফাই করার জন্য। চিঠি আসতে ২৫ দিন থেকে একমাস এর মত সময় লাগে। চিঠিতে গোপন কোড লেখা থাকে, সেটি মানিবুকারের নির্দিষ্ট বে ইনপুট করলেই ঠিকানা ভেরিফাইড হয়ে যাবে। এবার ব্যাংক ভেরিফাই করতে হবে। ওডেস্ক, ইল্যান্স বা অন্য কোন ফ্রিল্যান্সিং সাইট থেকে স্ক্রিল এ পেমেন্ট সেন্ড করার পরে তা স্ক্রিল থেকে ব্যাংক এ পাঠাতে হবে। আপনি স্ক্রিল এর প্রোফাইল অপশন এ গিয়ে ব্যাংক এর সুইফট কোড এবং অ্যাকাউন্ট নাম্বার সঠিকভাবে দিলেই ব্যাংকে জমা হয়ে যাবে। এবার কাজ হল স্ক্রিল থেকে অল্প কিছু পরিমাণ ডলার (১৫ ডলার এর নিচে) আপনার ব্যাংক এ পাঠান। প্রথম লেনদেনে টাকা ব্যাংক এ আসতে মাসখানেক সময় লাগতে পারে।
টাকা এলো কি না জানতে নিয়মিত ব্যাংকে খোঁজ রাখুন অথবা ইন্টারনেট এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যালেন্স জানতে পারেন। টাকা চলে আসলে ব্যাংক এ যোগাযোগ করে আপনার অ্যাকাউন্ট এর স্টেটমেন্ট নিয়ে আসুন। এটা অবশ্যই লাগবে। এর পর এটি স্ক্যান করে মানিবুকার এর নিকট পাঠাতে হবে। এটি পাঠানোর জন্য আপনি এই ইমেইল এড্রেস ইউজ করতে পারেন (রহভড়@সড়হবুনড়ড়শবৎং.পড়স) কিংবা স্ক্রিল এ লগইন করে কনট্যাক্ট থেকে তাদের মেইল পাঠাতে পারেন। ব্যাংক এর সকল ইনফরমেশন এবং নাম ঠিক থাকলে দুইদিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যেই আপনার স্ক্রিল ভেরিফায়েড হয়ে যাবে এবং আপনার উইথড্রয়াল লিমিট বেড়ে যাবে। এরপর থেকে আপনি কোন ঝামেলা ছাড়াই ব্যাংক এ টাকা তুলতে পারবেন। সময় লাগবে ১ থেকে ২ দিন!
মাস্টার কার্ড:
পেওনিয়ার (Payoneer)নামে একটি প্রতিষ্ঠান সব ফ্রিল্যান্সারদেরকে একটি করে মাস্টারকার্ড পাঠায় অর্থ লেনদেন করার জন্য। এ কার্ডটি পাওয়ার জন্য আপনি যে ফ্রিল্যান্সিং সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলবেন তা পেমেন্ট অপশন থেকে পেওনিয়ারের কাছে মাস্টারকার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যেমন ওডেস্ক বা ইল্যান্স এর মাধ্যমে আবেদন করতে হলে এখানের ওয়ালেট বা পেমেন্ট অপশন এ গিয়ে মাস্টার কার্ডের জন্য সাইন-আপ করার লিংকে ক্লিক করলেই পেওনিয়ার ডটকম সাইটে নিয়ে যাবে। সেখানে নতুন ব্যবহারকারী হিসেবে আপনি আপনার পূর্ণ নাম ঠিকানা ব্যবহার করবেন। এ সাইটে সাইন আপ করতে পাসপোর্ট বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর সিরিয়াল নাম্বার দিতে হবে। কোন আবাসিক এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন ইউনিভার্সিটির ঠিকানা দেয়া যাবে না। সাইন-আপ ফরমে ঠিকানা লেখার সময় ৩০ অক্ষরের মধ্যে রাখতে হবে।
কার্ড হাতে পাবেন দুটো উপায়ে। এক হচ্ছে সাধারণ, এজন্য পেওনিয়ারকে অগ্রিম ২০ ডলার ফি দিতে হবে। তাহলে তাঁরা কার্ড ইস্যু করবে। সাধারণভাবে কার্ড হাতে পেতে এক মাস সময় লাগবে। দ্বিতীয় সিস্টেম হলো ডিএইচএল কুরিয়ার মেথড। এটার মাধ্যমে আপনি চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই কার্ড পেয়ে যাবেন। এজন্য অবশ্য ফি গুনতে হবে ৬০ ডলার!
কার্ড হাতে পাওয়ার পর সেটি অ্যাক্টিভেট করতে হবে পেওনিয়ার ওয়েবসাইটে লগ-ইন করে। নিরাপত্তার জন্য পিনকোড দিতে হবে চার ডিজিটের। এরপর কার্ডটি ব্যবহার উপযোগি হয়ে যাবে। তবে আপনাকে আগেই জানিয়ে রাখি, পেওনিয়ার কার্ড দিয়ে টাকা তোলা অনেক খরচের ব্যাপার। যেখানে স্ক্রিল থেকে টাকা তুলতে গেলে আপনার সবমিলিয়ে সাড়ে তিন ডলার খরচ হবে সেখানে পেওনিয়ারে খরচ প্রায় দ্বিগুণ। পেওনিয়ার এ ২০ ডলারের কম উইথড্রয়াল সাপোর্ট করে না। তাই ওডেস্ক বা ইল্যান্স বা অন্য সাইট থেকে উইথড্র করবেন ২০ ডলার বা তার বেশি। উইথড্র করলেই সাথে সাথে কার্ড এ ডলার আসবে না। এটা অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকবে দুদিন। এখানে বলা হবে যে আপনি যদি এখনই টাকা নিতে চান তাহলে আপনাকে আড়াই ডলার খরচ করতে হবে। আর যদি তা খরচ করতে না চান তাহলে দুইদিন অপেক্ষা করতে হবে। এখন আপনি যদি আড়াই ডলার খরচ করতে পারেন তাহলে তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যে আপনার কার্ড এ ডলার চলে আসবে। আর তা না হলে অপেক্ষা করতেই হচ্ছে!
কার্ডে টাকা জমা হওয়ার পর এবার নিজ হাতে টাকা আনার পালা। এটি যেহেতু মাস্টার কার্ড, তাই দেশের যেকোন ব্যাংকের মাস্টারকার্ড সাপোর্টেড এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা যাবে। ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক সহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক মাস্টার কার্ড সাপোর্ট করে।
সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার (Bank Transfer):
ফ্রিল্যান্সিং সাইট থেকে টাকা পাওয়ার জন্য এটি বেশ ঝামেলাবিহীন উপায়। প্রায় সব ফ্রিল্যান্সিং সাইটই সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার সাপোর্ট করে। ওডেস্ক থেকে টাকা আসতে মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘন্টা ব্যাংকিং আওয়ার সময় লাগে। ওয়্যার সিস্টেম যোগ করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সাইটের উইথড্রয়াল মেথড থেকে ওয়্যার ট্রান্সফার সিলেক্ট করে সেখানে ব্যাংকের পরিপূর্ণ তথ্যাদি বসাতে হবে। এখানে প্রয়োজন হবে ব্যাংকের সুইফট কোড, সম্পূর্ণ অ্যাকাউন্ট নাম্বার, ব্যাংকের শাখার পূর্ণ ঠিকানা। এক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং সাইটে আপনার নাম ও ব্যাংকে আপনার নাম একই হতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আপনার প্রথম ট্রানজেকশন পাঠালে টাকা ব্যাংক এ আসলেই ব্যাংক ভেরিফাই হয়ে যাবে।
যেসব কাজ করবেন
অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন (Android Application Development):
স্মাটফোনের পূর্ণ স্বাদ আসে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে। এটি জীবনকে অনেকটা সহজ করে দেয়, মজার করে তোলে। স্মার্টফোনের ব্যবহার তাই যত বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে অ্যাপ্লিকেশনের বাজারও। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামীর আইটি বাজার হবে মোবাইল ডিভাইস এবং স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন বাজার নির্ভর। প্রতি প্রান্তিকেই স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনের বাজার বাড়ছে ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে। তথ্যানুযায়ী, তৃতীয় প্রান্তিকে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের চাহিদা বেড়েছে ৮ শতাংশ (কাজের সংখ্যা ৫ হাজার ৫০৯ টি)। যদিও এই বৃদ্ধি গত প্রান্তিকের তুলনায় কম হয়েছে, আর কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে সেপ্টেম্বর জুড়ে ডেভেলপারদের আইওএস-৬ সংস্করণটির জন্য অপেক্ষা। বিশেষজ্ঞরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং সামনের বছরগুলোতে জ্যামিতিক হারে বাড়বে।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (Web Development):
ইন্টারনেটের জন্য ওয়েব সাইট তৈরী ওয়েব ডেভেলপমেন্টের একটি অংশ, এর সাথে আরও যোগ করা যেতে পারে ওয়েব সাইটের ডিজাইন এবং সাইটের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের উন্নয়ন। ওয়েব সাইট তৈরীতে প্রাথমিকভাবে আমরা ক্লায়েন্ট সাইড কোডিং হিসেবে এইচটিএমএল, সিএসএস, জেকোয়ারি, অ্যাজা ব্যবহার করে থাকি আর সার্ভার সাইড কোডিং এর জন্য পিএইচপি, এএসপি, জাভা, পাইথন বা রুবি ব্যবহার করে থাকি। আর তথ্য সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই ডাটাবেস তো থাকছেই। জনপ্রিয় ডাটাবেসগুলোর মধ্যে রয়েছে মাইক্রোসফটের এসকিউএল সার্ভার, মাইএসকিউএল, ওরাকল, এসকিউএল লাইট এবং মনগোডিবি। মার্কেটপ্লেসগুলোতে ওয়েব উন্নয়নের জন্য ক্লায়েন্ট/সার্ভার সাইড এবং ডাটাবেস মিলিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্রচুর কাজ পাওয়া যায়। ওয়েব ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি ই-কর্মাস, ইউআই ডিজাইন, ওয়েব প্রোগ্রামিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, বাগ ফিিংয়েরও অনেক কাজ পাওয়া যায়। প্রতিদিন চাহিদা বেড়ে চলেছে এমন কিছু পরিসংখ্যান দিই- তৃতীয় প্রান্তিকে এইচটিএমএল ৫ এর কাজের সংখ্যা বেড়েছে ৪৪ শতাংশ (৩০৩৮ টি কাজের হিসেবে), জেকোয়ারি- জাভা ক্রিপ্টের একটি লাইব্রেরী যার কাজের পরিমান বেড়েছে ৩২ শতাংশ (২৯৭২ টি কাজের হিসেবে), জেন্ড এর কো ফাউন্ডার অ্যান্ডি গুটম্যান্স মোবাইলের জন্য সুবিধা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিতে পিএইচপি’র কাজ বেড়েছে ১৯ শতাংশ (৩৫,০৬১ টি কাজের হিসেবে)। সিএসএস আর মাইএসকিউএল বরাবরের মতই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, যেগুলোতে কাজের পরিমান যথাক্রমে ১৯ শতাংশ এবং ১৮ শতাংশ, ৭০৯৯ এবং ১১০০৭ টি কাজের হিসেবে।
ইন্টারনেট মার্কেটিং (Internet Marketing)-
পণ্যসেবা গ্রাহক পর্যন্ত পৌছানোর জন্য যা কিছু করা হয় তাকেই আমরা সহজ ভাষার মার্কেটিং বা বাজারজাতকরণ বলতে পারি। আরও সহজ ভাষায় বললে একজন মার্কেটার তার পণ্য বিক্রির জন্য যে সকল পন্থা অবলম্বন করেন তাই মার্কেটিং। ইন্টারনেটে বাজারজাতকরণের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং, মোবাইল মার্কেটিং, ব্যানার মার্কেটিং, ফোরামে আলোচনা, অনলাইন প্রেস রিলিজ, ব্লগ মার্কেটিং বাজারজাতকরণের অন্যতম পরীক্ষিত উপায়। ইন্টারনেটে বাজারজাতকরণের বিভিন্ন ধরণ অনুযায়ী অনেক কাজ পাওয়া যায়। গুগলের পান্ডা এবং পেঙ্গুইন আধুনিকায়নের ফলে গত প্রান্তিকের অনিশ্চয়তার বাজারে আবার প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। আস্থা ফিরে আসায় ইন্টারনেট মার্কেটিং এর কাজের পরিমান বেড়েছে। ১৫,৪৭৫ টি কাজের ভিত্তিতে এই হার ১২ শতাংশ। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর বর্ধনশীলতার হার ১২ শতাংশ, ১০৫০৯ টি কাজের হিসাবে। লিংক বিল্ডিং এর কাজ বেড়েছে ৮ শতাংশ, যেখানে কাজের সংখ্যা ৭০৬৮ টি।
গ্রাফি ডিজাইন (Graphic Design) -
অভিনব কিছু করতে চান, আঁকাআঁকিতে বেশী ঝোঁক? সময় পেলেই কম্পিউটারের পেইন্ট টুলস, ইলাস্ট্রেটর, ফটোশপ দিয়ে মনের ইচ্ছেঘুরি উড়িয়ে নতুন কিছু আঁকতে ভালবাসলে গ্রাফি ডিজাইনার হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন। মুক্ত এবং নিরাপদ পেশা হিসেবে সহজেই এটাকে নেওয়া যেতে পারে। মার্কেটপ্লেসগুলোতে গ্রাফি ডিজাইনের যথেষ্ট কাজ রয়েছে। পাশাপশি কাজের ক্ষেত্র হতে পারে ইন্টারঅ্যাক্টিভ মিডিয়া, জার্নাল, প্রমোশনাল ডিসপ্লে, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, লোগো ডিজাইন, কর্পোরেট রিপোর্টস, মার্কেটিং ব্রোশিয়ার এবং ওয়েব ডিজাইন। মার্কেটপ্লেসে তৃতীয় প্রান্তিকে গ্রাফি ডিজাইনে কাজের পরিমান বেড়েছে ২১% (২৭২২১ টি কাজের ভিত্তিতে) আর লোগো ডিজাইনে বেড়েছে ২১% (৬৯৪০ টি কাজের ভিত্তিতে)।
ওয়ার্ডপ্রেস (WordPress Theme Development)-
এটি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিএমএস (কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম)। ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে খুব অল্প সময়েই ব্লগ কিংবা কর্পোরেট সাইট বানানো সম্ভব। মার্কেটপ্লেসগুলোতে প্রচুর পরিমানে ওয়ার্ডপ্রেস এর কাজ পাওয়া যায় এবং প্রতিদিনই এর চাহিদা বেড়ে চলেছে। ৭৭০৩ টি কাজের ভিত্তিতে যার পরিমান ২৭ শতাংশ।
প্রুফরিডিং (Proof-Reading)-
প্রুফরিডিং এর কাজ হচ্ছে কোন লেখা প্রকাশের পূর্বে সর্বশেষ পরিমার্জন পরিবর্ধন করা। একজন প্রুফরিডার বিভিন্ন বিষয়ের উপর কাজ করতে পারেন। বই, বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক লেখা, ডকুমেন্টেশন, অনুবাদ, ওয়েবসাইট কনটেন্ট - এসব বিভাগ একজন প্রুফরিডারের কাজের ক্ষেত্র হতে পারে। বিভিন্ন ছাপানো / অনলাইন পত্রিকা, প্রকাশনা, প্রকাশনা সংস্থায় প্রচুর প্রুফরিডারের চাহিদা রয়েছে। চাহিদার ভিত্তিতে ১৭৩০ টি কাজের হিসাবে প্রুফরিডিং কাজ বেড়েছে ২৬ শতাংশ।
ডাটা এন্ট্রি (Data Entry Online Work) -
কাগজবিহীন সবুজ অফিসের কারণে বিভিন্ন অফিসগুলো তাদের কাগজের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক তথ্যাগার তৈরী করায় ডাটা এন্ট্রির চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এই প্রান্তিকে ৬৯৩২ টি কাজে ১৪১% হারই সেটা প্রমাণ করে।
কাজ শিখবেন কিভাবে?
আপনি যদি প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ক্যারিয়ার (Freelance Career) গড়তে চান, তাহলে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। কিন্তু, বেশিরভাগ মানুষ কোনকিছু চিন্তা না করেই প্রশিক্ষণের দিকে ছুটে। যার ফলে, হয় অপ্রয়োজনীয় দক্ষতার উপর প্রশিক্ষণ নেয় বা একাধিকবার প্রশিক্ষণ নিতে হয়, নতুবা কিছু না শিখেই শুধু সার্টিফিকেট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। বেশিরভাগ মানুষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান, পয়সার লোভে। কিন্তু পয়সার লোভ নিয়ে আগালে, বেশিদূর যাওয়া যায় না। পয়সার সাথে আরেকটি জিনিষের দরকার পড়ে, আর তাহলো- চধংংরড়হ।
চধংংরড়হ নিয়ে পয়সা কামানোর জন্য পেশায় প্রবেশ করতে চাইলে, আপনাকে সঠিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আর প্রশিক্ষণ নেবার আগে আপনাকে আপনার ক্যারিয়ার এর পথ ঠিক করতে হবে। মানে, আপনি কোন দিকে আগাবেন, কি কি করতে চান, ইত্যাদি। ক্যারিয়ার শব্দটাকে অনেকে চাকুরির সমার্থক ভাবেন। কিন্তু ক্যারিয়ার আলাদা একটা জীবন, আপনার প্রফেশনাল জীবন। জীবনের ৮ ঘন্টা যদি ঘুম হয়, ৮ ঘন্টা ব্যক্তিগত জীবনের জন্য হয়, তাহলে আপনার ক্যারিয়ার, ঘুমবাদে আপনার জীবনের অর্ধেক। তাই ক্যারিয়ার পরিকল্পনা, আপনার জীবনের পরিকল্পনার ৫০%। ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করতে গেলে সর্বপ্রথম আপনার নিজেকে চিনতে হবে। আপনাকে অবশ্যই আপনার দক্ষতা নিজেকে যাচাই করে নিতে হবে! নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে:
আপনি কি ভালো গান গাইতে, নাঁচতে অথবা আঁকাআঁকি করতে পারেন?
আপনি কি ব্রিটিশ বা আমেরিকান সিটিজেনদের সঙ্গে সহজেই কমিউনিকেশন করতে পারেন?
আপনার কি ভালো ট্রান্সলেশন দক্ষতা রয়েছে?
আপনার কি ক¤িপউটার দক্ষতা আছে?
আপনার কি লেখালেখির দক্ষতা আছে?
আপনার কি ভালো বানিজ্যিক ধ্যান-ধারনা আছে?
আপনার কি ভালো ডিজাইন বা আঁকাআঁকির দক্ষতা আছে?
এই ৭টা প্রশ্ন, নমুনা মাত্র। নিজেকে প্রশ্ন করে বের করে নিন, এমন সব দক্ষতা, যা অন্যকেউ করে দিতে টাকা নিবে। মানে, এই দক্ষতাগুলো যেনো বিক্রির উপযোগী হয় সেটি বিবেচনা করতে হবে। এরপর আপনি সবচেয়ে বেশি কি পছন্দ করেন সেটি নির্বাচন করতে হবে। আপনি যদি টেলিভিশন দেখতে অথবা মুভি দেখতে পছন্দ করেন, সেটিও খারাপ নয়। আপনি যদি রোমান্স-প্রিয় হন, তাতেও সমস্যা নেই। এই চধংংরড়হ কাজে লাগিয়ে একজন মুভি ব্লগার বা রিলেশনশিপ বিষয়ক ব্লগার হিসেবে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। আপনি কি বেশি পছন্দ করেন, সেটি নির্বাচন করতে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন:
কষ্টকর হওয়া স্বত্বেও আপনি কোন কাজটি বিনামূল্যে করতে পারবেন?
টানা ১৪ ঘন্টা কাজ করার পরেও আপনি কোনো চাপ বোধ করছেন না, এমনকি মাঝে মাঝে ডিনার করতে ভুলে যান?
এমনটি যদি হয়ে থাকে তাহলে আপনি ঐ কাজটি নিশ্চয় ভালোবাসেন। এমন কাজ প্রয়োজনে আপনি বিনামূল্যেও করতে পারেন। কারণ সেখানে আপনার পছন্দ জড়িয়ে আছে।
চাপের কাজ হলেও কোনটি করে আপনি সন্তুষ্ট হন? (যেমনঃ মানুষের প্রশংসা)
আপনি কোন বিষয়টি ভালো জানেন যেটা সাধারণত অন্য কেউ জানে না এবং কাজটি করার সমস্ত বিষয়টি আপনি উপভোগ করেন?
এই প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে আপনি আপনার ১. দক্ষতা ও ২. পছন্দের বিষয় খুঁজে পাবেন। এখন বিষয়গুলো একত্র করেন এবং এটিকে আপনার ক্যারিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। উদাহরণস্বরুপ বলতে পারি, আমি একজনকে চিনি যে কিনা বাচ্চাদের অনেক পছন্দ করে কিন্তু কাজ করে কল সেন্টারে, যেটি সে একেবারেই পছন্দ করতো না! কিন্তু এখন সে বাচ্চাদের অনলাইনে শিক্ষাদান করায় এবং এটি সে অনেক মজা করে করে। আপনি যেটি করবেন সেটির পক্ষে আপনার আগ্রহটাই বড়। আমার কথাই ধরি, ইন্টারনেটের প্রতি আমার আগ্রহ সব সময়েই কিন্তু আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা ক¤িপউটারে নয়, বিবিএ! অথচ আমি আমার আমার ব্যাকগ্রাউন্ড, দক্ষতা ও আগ্রহে কাজে লাগিয়ে ইন্টারনেট মার্কেটার হয়েছি।
আপনার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা হয়ে যাবার পর, আপনাকে কি কি শিখতে হবে, সেটারও পরিকল্পনা করতে হবে। যা যা শিখতে হবে, এর মানে এই না যে আপনার সব কিছুর প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সেটা সবার জন্য বলবো, গুগলকে আগে কাজে লাগাতে শিখুন। সেখান থেকে প্রাথমিক ধারণা নিন। তারপর যেগুলো জটিল মনে হয়, শুধু সেগুলার জন্য প্রশিক্ষণ নেবার মনঃস্থির করুন। কিন্তু, জটিল কিছুতে যাবার আগে গুগল আপনাকে ধারণা দিতে পারে। যখন আপনি জানতে বা বুঝতে পারলেন আপনি কি করতে চান, আর কি কি প্রশিক্ষণ নিতে চান, তখনই সে বিষয়ক এপার্টদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণের বিষয়টি ভাবতে পারেন। আমি মনে করি, আইডিয়া ছাড়া প্রশিক্ষণ করা মানে টাকাটাই অপচয় করা! কারণ বেশিরভাগ মানুষ এমনকি আমিও প্রশিক্ষণের প্রথম দিকে প্রয়োজনীয় সাধারণ বিষয়গুলো জানতে পারি না। তাই প্রশিক্ষণের বিষয়ে আগে থেকে বেসিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
১০ টি বিষয়
অ্যাপ্লিকেশন বা কাজে বিড করার আগে যে ১০ টি জিনিস জানতে হবেঃ
১. বিড করার আগে দেখে নিন বাইয়ারের রেটিং আর পেমেন্ট মেথড (Buyer Rating & Payment Method)। বায়ারের রেটিং ভালো না হলে কিংবা তাঁর পেমেন্ট মেথড ভেরিফাইড না হলে উক্ত কাজে অ্যাপ্লিকেশন করা ঠিক হবেনা।
২. খুব বেশি দক্ষতার প্রয়োজন হয় এমন কোন কাজে নতুনরা অ্যাপ্লিকেশন করবেন না। তাছাড়া আপনার চেয়ে খুব দক্ষ ফ্রিল্যান্সাররা যেখানে প্রতিযোগিতা করছে সেখানে না যাওয়াই ভাল, সেখানে অপ্রয়োজনে আপনার সময়ের অপচয় হবে।
৩. দেখে নিন কতজনকে ইন্টারভিউতে ডাকা হয়েছে। ৪ থেকে ৫ জনকে ইতিমধ্যে ইন্টারভিউতে ডাকা হয়ে গেলে সেই কাজটি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
৪. করতে পারবেন না এমন কোন কাজে কোনভাবেই অ্যাপ্লিকেশন করতে যাবেন না। এতে আপনার সময় যেমন নষ্ট হবে তেমনি নিজের উপর আস্থাও কমে আসবে, হতাশ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
৫. অ্যাপ্লিকেশন (Before Applying the Job) করার আগে অবশ্যই আপনার প্রোফাইলটাকে ভাল করে সাজাতে হবে, এটি এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে বায়াররা আপনার প্রোফাইল দেখে ধারণা করতে পারে আপনি একজন প্রফেশনাল এবং দক্ষ কর্মী। প্রোফাইলে অবশ্যই আগে করা কাজের পোর্টফোলিও থাকতে হবে।
৬. কাজ পাওয়ার জন্য কভারলেটার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা লেখার সময় তাই আপনাকে সচেতনভাবে লিখতে হবে। কাজের বর্ণনার সাথে মিল রেখে অ্যাপ্লিকেশন বা কাভারলেটারটি লিখবেন। তাঁকে এই কাভার লেটারটির মাধ্যমে বোঝাতে হবে আপনি এই কাজটি পারবেন, কিভাবে করবেন, কত সময় লাগবে এবং কিভাবে তাঁর কাছে রিপোর্টিং করবেন। সবচেয়ে ভালো হয় অ্যাপ্লিকেশনের সাথে আপনার একই ধরণের কাজের ফাইল যুক্ত করে দিতে পারলে।
৭. বাংলাদেশি নতুন ফ্রিল্যান্সাররা একটা ভুল করেন। তাঁরা কাজ পাওয়ার জন্য বায়ারকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেন। বোঝাতে চান এই কাজ ছাড়া তিনি খুব বিপদে আছেন, তার পরিবার অর্থকষ্টে ভুগছে। সুতরাং এই কাজটি তার খুবই দরকার। সাবধান, এই কাজটি কোনভাবেই করতে যাবেন না। আপনি আপনার দক্ষতাকেই বায়ারের কাছে বড় করে দেখাবেন।
৮. কভারলেটারের এ অহেতুক কথা লিখে বড় করবেন না। এতে বায়াররা কাভার লেটারকে টেমপ্লেট টাইপের লেখা ভাবতে পারে, না পড়ার সম্ভাবনাই অনেক বেশি।
৯. প্রাথমিক ভাবে সহজ কাজে অ্যাপ্লিকেশন করুন তবে প্রজেক্টের মূল্য বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি কমানোর চেষ্টা করবেন না। কম মূল্য দিলে বায়ার কর্তৃক কাজ দেয়ার সম্ভাবনা বেশি এটি কোনভাবেই ভাববেন না। বরং এতে আপনার স¤পর্কে বায়ার নেতিবাচক ধারণা পোষণ করবে।
১০. আর হ্যা, যত পারুন অনলাইনে থাকার চেষ্টা করুন। নতুন কোন প্রজেক্ট সাইটে প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপ্লিকেশন করার চেষ্টা করুন। তবে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কভারলেটার কৌশল
ভাল কাভার লেটার (Cover Letter Writing) বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন কাভার লেটার যেটি প্রথম দেখাতেই একজন বায়ারের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। এধরণের কাভার লেটার লেখার আগে আপনাকে মনে রাখতে হবে, সেটি অবশ্যই সংক্ষিপ্ত করবেন। প্রথমে বায়ারকে বোঝাতে হবে আপনি কাজটা বোঝেন, তারপর অল্প কথায় বলতে হবে: এই কাজ কোনো ব্যাপার না, আমি আগেও করেছি, এই দেখ [লিংক] বা স্যা¤পল (এটাচ করা ফাইলে)। শুধু এই লাইনটাই, ইংরেজিতে সবচেয়ে ভাল কভার লেটার।
অনেকেই বলতে পারেন এত ছোট আবার কাভার লেটার হয় নাকি? হয়, কেন হবেনা? আমি যদি দুই লাইনেই তাঁকে সবকিছু বোঝাতে পারি কি দরকার আমার অনেক বড় কভারলেটার লেখার? বড় বা লম্বা কভার লেটারের কোন মানে নেই যদি বায়ার সেটি না পড়ে। একবার বায়ারের আসনে নিজেকে বসান, বা নিজেই বায়ার হয়ে যান আপনার কিছু প্রোজেক্টের সাহায্যের জন্য। দেখেন কাদের কভার লেটার পছন্দ হয়েছে, কাদের হয় নাই। ওখান থেকেই বুঝতে পারবেন আসলে কী করা উচিত, কি করা উচিৎ নয়।
লম্বা কভার লেটার দিলে ক্লায়েন্ট পড়তে চায় না। আপনি পড়বেন? আপনি যা চাইছেন, তা না দিয়ে যদি কেউ ইতিহাস বর্ণনা শুরু করে, তাহলে আপনি তাকে পছন্দ করবেন না এটাই স্বাভাবিক। উল্টো ভাববেন যে, আপনি যে কাজের জন্য পোস্ট দিয়েছেন তার কিছুই সে পড়ে নি। সাধারণত: ৫ সেকেন্ডের ভিতরে আপনাকে বায়ারের মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে, তারপর অন্য কিছু পড়তে আগ্রহ পাবে। তাই প্রথম ২ লাইনেই আকর্ষণ করার চেষ্টা করুন।
প্রথম কাজ পাওয়া
কিভাবে প্রথম কাজ পাওয়া যায়? (Ways To Get First Online Work or Job)
একটি প্রশ্ন আমাদের খুব বেশি শুনতে হয়, আমি এত এত কাজে অ্যাপ্লিকেশন করি কিন্তু কাজ তো পাই না! কি করতে পারি? উত্তর পরে বলছি। তার আগে একটি বিষয় নিশ্চিত হওয়া দরকার।
আপনার প্রোফাইল কি পরিপূর্ণ?
আপনার কি উক্ত কাজে দক্ষতা আছে? আপনি কি আপনার কাজের স্যা¤পল যুক্ত করেছেন?
আপনি কি ভালমানের কভারলেটার লিখেছিলেন অ্যাপ্লিকেশনের সময়?
উত্তর যদি না হয়, তবে বলবো কেন আপনাকে একজন বায়ার কাজ দিবে? কোন কাজে অ্যাপ্লিকেশন করার আগে উক্ত বিষয়গুলো অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। প্রোফাইল সাজানোর জন্য আপনি যে বিষয়ে কাজ করেন সেই বিষয়ের ভাল মানের ফ্রিল্যান্সারদের প্রোফাইল দেখুন, সেখান থেকে ধারণা নিন। এরপর আপনার প্রোফাইলকে তাঁদের মত করে সাজান।
এক্সপার্ট হউন
নিজেকে অবশ্যই বিশেষায়িত করতে হবে (Become an Expert or Skilled Professional Online)!
আপনাকে একজন বিশেষায়িত প্রফেশনাল হতে হবে। আপনি যে কাজ করতে চান কেবল সে অনুযায়ীই আপনার প্রোফাইলকে সাজাতে হবে। কোনভাবেই আপনার প্রোফাইলে অনেকগুলো বিষয় হাইলাইট করা যাবেনা। যেমন: আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করেন, আবার প্রোফাইলে বিজনেস প্ল্যান রাইটিংও দিয়ে রেখেছন।
দুটি স¤পূর্ণ ভিন্ন জিনিস, বায়াররা তাই আপনার প্রোফাইল দেখে কনফিউজ হয়ে যাবে, আপনি আসলে কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ সেটি বুঝতে পারবে না। আর কনফিশউন নিয়ে কেউ আপনাকে কাজ দিবেনা সেটি নিশ্চত থাকতে পারেন! আর আপনি যে ক্যাটেগরির কাজ করেন পোর্টফোলিওতে কেবল ঐ ক্যাটেগরির কাজগুলোকেই দিতে হবে। আপনি যে কাজটি ভালো পারেন এটি বায়ারকে বোঝাতে প্রচুর স্ক্রিল টেস্ট এক্সাম দেয়ার কোন বিকল্প নেই।
প্রোফাইল সাজানোর পর কাজে অ্যাপ্লিকেশন করার সময়ও অনেক সতর্ক থাকতে হবে। ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ফ্রিল্যান্সারই কাজের বিস্তারিত না পড়ে সেখানে অ্যাপ্লিকেশন করে। আর বায়ার কাভার লেটার একনজর দেখেই তাঁদের অ্যাপ্লিকেশন রিজেক্ট করে দেয়। আপনি এবার চিন্তা করুন, ঐ ৬০ কিংবা ৭০ শতাংশের মধ্যে আপনি একজন না তো?
একই কাভার লেটার বার বার লেখার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কাস্টোমাইজ কভারলেটার লিখতে হবে প্রতিটি প্রজেক্টের জন্য। বায়ারের সমস্যা বুঝে সেটা নিয়ে কথা বলবেন কভারলেটারে। কিভাবে সেটির সহজ সমাধান হতে পারে সেটিও ফোকাস করবেন। মনে রাখবেন বায়ার তাঁর সমস্যা সমাধানের জন্যই এখানে এসেছে।
কোন কাজে ইন্টারভিউতে ডাক পড়লে প্রথমে তাঁকে ধন্যবাদ দিতে পারেন ইন্টারভিউতে ডাকার জন্য। কোনভাবেই ভাববেন না ইন্টারভিউতে আপনার ডাক পড়েছে মানে আপনি নিশ্চিত ঐ প্রজেক্টটি পেয়ে গেছেন। ইন্টারভিউয়ের সময় মাইক্রোফোন ঠিক রাখবেন আর নিরব স্থানে বসে কাজ করতে পারলে ভাল হয়।
প্রচলিত ভুল ধারণা
দ্রুতগতিতে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ে (Freelance Outsourcing)এগিয়ে যােছ বাংলাদেশ। আর এই এগিয়ে যাওয়ার বিপরীতে ফ্রিল্যন্সিং নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা তৈরি হেছ। ভালোভাবে না জেনে অন্যকে উপদেশ দেওয়ার কারণেই এমনটি ঘটছে। এই ভুলগুলো সম্পর্কে জানা ও সচেতন থাকা ভাল।
ইনভেস্ট করে আয় করাঃ
হ্যাঁ, ইনভেস্ট করলেই আয় করা যায় এমন একটি ভুল ধারণা সর্বত্র রয়েছে এখনও। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে ইনভেস্ট করে সর্বশাš হওয়া খুব সোজা। পিটিসিতে, হাইপে, এমএলএম-এ ইনভেস্ট করলে আপনি যে ধরা খাবেন এটি অনেকটাই নিশ্চিত থাকতে পারেন। বাংলাদেশে অনেকে ইতিমধ্যে তাদের ইনভেস্টকৃত মূলধনও হারিয়েছে। সুতরাং যেখানে সেখানে ইনভেস্ট করলেই যে আপনি আয় করতে পারবেন এমনটি কখনোই ভাববেন না।
রেফারেলের মাধ্যমে আয়ঃ
আমাদের অনেকেরই একটা বদ অভ্যাস আছে। যাচাই বাছাই না করেই বলে, আমি শুনেছি আমার এক বন্ধুর মামার চাচার দুঃস¤পর্কের এক ফুফাতো ভাইয়ের ছোট ভাই একটা সাইট থেকে ১ ডলার আয় করে, আগামী মাসের ১৫ তারিখে পেআউট করবে অ্যালার্টপে-তে! কোনভাবে তার কাছ থেকে সাইটের অ্যাড্রেস নিয়ে সাইন আপ করি এবং বড় বড় কমিউনিটি সাইটগুলোতে রেফারেল লিঙ্কসহ পোস্ট দেই, ¯প্যাম কমেন্ট দেই! এই ধরণের কাজগুলো একেবারেই বোকামি। রেফারেলের মাধ্যমে আয় করার জন্য গুজবে কান দিয়ে স্প্যামিং করে কোন লাভ নেই।
খুব সহজে বিনা পরিশ্রমে ইন্টারনেট থেকে আয় করা যায়ঃ
এটা সবচেয়ে বড় ভুল ধারনা। আপনি আশা করছেন একজন চাকুরিজীবি কিংবা ব্যবসায়ীর চেয়ে বেশি আয় করবেন অথচ পরিশ্রম করবেন না! এটি কি কোনভাবেই হতে পারে? ইন্টারনেটে যে পদ্ধতিতেই আয় কর ন না কেন, আপনাকে যথেষ্ট সময় ও মেধা ব্যায় করতে হবে।
পিটিসি সহজে আয়ের কার্যকর পদ্ধতিঃ
পিটিসি হেছ কোন ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্দিষ্ট লিংকে ক্লিক করবেন আর আপনার নামে টাকা জমা হবে। বিষয়টি পুরোপুরি প্রতারণা ছাড়া কিছুই না। সাবধান, টাকা আয়ের জন্য পিটিসি সাইটে জয়েন করেছেন তো মূলধনই গায়েব হয়ে যাবে!
পেপ্যাল না থাকলে আয় করা যাবে নাঃ
পেপ্যাল না থাকায় বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেটে আয় করার কোন পথ নেই। এমনটি মনে করেন অনেকে। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। পেপ্যাল ছাড়াও অনেক উপায়ে বাংলাদেশে টাকা আনা যায়।
0 comments:
Post a Comment